আহসান হাবীবের কবিতার বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ আলোচনা।

আহসান হাবীবের কবিতায় আমিত্ববোধ

আহসান হাবীবের কবিতা –


একেই বলে আত্ম-সঙ্গায়ন,আত্ম পরিচয় -ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখা ও খোঁজা। কত বর্ষ যুগান্ত পেরিয়ে গঙ্গা যমুনার উজান ভাটিতে অনেক বদল এক, সত্তার প্রথমতম জিজ্ঞাসায় একূল- ওকূল কম্পিত হল বহুবার। আর তাই বোধ হয় রবি ঠাকুরের কাল পেরিয়ে চল্লিশের তরুনতর কবি আহসান হাববীকেও খুঁজে নিতে হয় সত্তার ভেতরমহলে।

আমরা জানি কবি ফররুখ আহমদ মুসলিম জনতার কথা বলেছেন কিন্তু কবে আহসান হাবিব নিজের মধ্য ‍দিয়ে মানুষের কথা বলেছেন। স্বচক্ষে দেখা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ,ভাষা আন্দোলন ,গণঅভুত্থান সত্তেউ কবি আহসান হাবিবের কবিতার ভেতরে কোন রাজনৈতিক ভাব আদর্শ ছিল না ।

আহসান হাবীবের কবিতা নিজের ভাবনা, মনস্তাত্ত্বিক ভাবনা, আত্মবিশ্লেষণ বেশি প্রকাশ করেছেন ।প্রেম এবং সমাজ চেতনা তার কবিতার মূল বিষয় ।দু হাতে দুই আদিম মানুষের পাথর নিয়ে কবি যেন প্রাচীন কৃষি নির্ভর গ্রামীণ মানুষের ক্ষেত খামারে নেমে যাচ্ছেন।প্রাচীন সভ্যতার মানুষের পাথরের ন্যায় শক্ত মাটিতে ফসল বুনে দেয়ার প্রথম মানুষটির স্থানে নিজেকে বসিয়ে দিচ্ছেন কবি।

এই কাব্যের কবি কোন শহুরে সমাজের স্থায়ী বাসিন্দা নন।বরং সময়ের প্রয়োজনে, জীবনের প্রয়োজনে ,তাকে ত্যাগ করতে হয়েছে তার প্রিয় গ্রাম।পৃথিবীর বিবর্তনে মানুষকে পার করতে হয়েছে পুরনো সভ্যতা।পুরনো সভ্যতার যে মানবিক আবেদন তাকে এখনো মানুষ পাশ কাটিয়ে যেতে পারেনি। ফলে দু হাতে দুই আদি পাথর নিয়ে কবি মানবিক গ্রামের দিকে যাত্রা করেছেন।

গ্রামে বসবাস করা মানুষজন যেভাবে আপন জনের মতো সকলের খোঁজ-খবর রাখে সেভাবে কবি সকলের খোঁজ খবর রাখছেন।বীভৎস চিত্রকল্প গুলো নিজের জন্য রাখছেন।ধর্ষণ ,হত্যাকান্ড, রক্তপাত ,সবই কবি নিজেই ধারণ করছেন।করুন শহরের এই হিংসুটে চিত্রকল্প গ্রাম জীবনের মানুষের জন্য নয়।

আহসান হাবীবের কবিতা তে সরাসরি প্রবেশ করেছেন ইতিহাসে, শুধু ইতিহাস নয় প্রাগৈতিহাসিক কালেও এবং সবার মাঝে নিজেকে.ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন।সবার সুখ দুঃখের সঙ্গী হয়ে নিজের আত্মমগ্নতা বা আত্ম অস্তিত্বকে জানান দিতে চান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিধ্বস্ত এই দেশে শুধু পড়ার গন্ধ পাওয়া যায়। ফুলের সুবাস কোথাও নাই।সবাই এখন নিঃসঙ্গ তাই কবি তার প্রশ্ন তুলেছেন:

শুধু এই নয় কবি বিচ্ছিন্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করেছেন। সমস্ত বিষয়বস্তুর কাছে তাই কৃপা ভিক্ষা করেছেন।একজন শেকড় বিচ্ছিন্ন মানুষের হাহাকার,আত্মজ্ঞানে উদ্বুদ্ধ একজন কবির প্রবল হাহাকার রয়েছে এতে। আধুনিক মানুষের সংকট কবির মনে জেগে উঠেছে।তাই কবি নতুন করে আশ্বাসের বাণী শোনান।- 

— [কবিতা :যতবার ভোর হলো ]

কবিতার এই শেকড় সন্ধানী আত্মপরিচয় এর যে প্রবণতা তাকে কবি এড়িয়ে যাননি। কবিতার ধারণাকে যেমন  করে ফিরতে হয়েছে, তেমনি কবিকেউ ফিরতে হয়েছে এই বাংলায়।তাই আহসান হাবীবের কবিতা তে কবি বুঝিয়েছেন তিনি এই  বিধৌত গ্রাম বাংলার সন্তান। আধুনিক শহর তার পরিচয় কেড়ে নিতে পারেনি।  

আহসান হাবীবের কবিতা সহ – অন্যান্য বিষয় দেখুন

আহসান হাবীবের কবিতা – অন্য ওয়েবসাইটে খুজুন

1 thought on “আহসান হাবীবের কবিতার বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ আলোচনা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *