চাঁদের অমাবস্যা উপন্যাস রিভিউ (অস্তিত্ববাদী,মনস্তাত্ত্বিক,চেতনা প্রবাহ রীতি)

চাঁদের অমাবস্যা উপন্যাস রিভিউ

চাঁদের অমাবস্যা উপন্যাসের লেখক সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ। এই উপন্যাসটিকে কয়েকভাবে বিশ্লেষণ করা যায়-

১)অস্তিত্ববাদী দর্শনের উপন্যাস

২) মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস

৩)চেতনা প্রবাহ রীতির উপন্যাস

এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র যুবক শিক্ষক আরেফ আলি। আরেফ আলি একটি বাড়িতে গৃহশিক্ষক হিসেবে সে বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়ান এবং সামান্য কিছু রোজগার করেন। এই বাড়িতেই আছেন দাদা সাহেব এবং তাঁর ছোট ভাই কাদের।

কাদের একদা এক রাত্রে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন।এভাবে কাদেরকে বাইরে বের হয়ে যাওয়া দেখে যুবক শিক্ষক আরেফ আলি কাদেরের পিছু নেন।কারন,কাদেরকে সবাই পীর বলে জানতো। তাই গভীর রাতে কাদেরের বাইরে যাওয়া আরেফ আলির কাছে বিষ্ময়াপূর্ণ মনে হয়।  কিন্তু পিছু নিতে নিতে একসময় আরেফ আলি  হারিয়ে ফেলেন কাদেরকে। আবার যেতে যেতে এক বাঁশঝাড়ের কাছে কোন কিছুর ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনতে পান তিনি। লক্ষ্য করতেই অন্ধকার আবছায়ায় অস্পষ্টভাবে চোখে পড়ে একটি মেয়ে মাটিতে শুয়ে আছে এবং কাদের সেখানে দাড়িয়ে।

এই ঘটনা দেখার পর থেকেই কাদেরের বিষয়ে যুবক শিক্ষকের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। শুরু হয় তাঁর অন্তরদ্বন্দ্ব। মেয়েটি কে?কি তার পরিচয়?সে এখানে পড়ে আছে কেন আর কাদেরের সাথে তারই বা কি সম্পর্ক? এই মনোদ্বন্দ্ব নিয়েই বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলে চাঁদের অমাবস্যা উপন্যাসটি।

চাঁদের অমাবস্যা উপন্যাসে অস্তিত্ববাদী দর্শন-

অস্তিত্ববাদী দর্শন হলো আধুনিক সময়ের দর্শন।এ দর্শনের মূল হলো মানুষ।
মানুষের অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর। তাই বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এ দর্শনের প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়।

স্বাধীন মানুষ তার স্বাধীনতা প্রকাশ করতে পারে অস্তিত্ববাদী দর্শনের মাধ্যমে।মানুষের বিবেক মানুষকে প্ররোচিত করে আর সেই বিবেকের সাথে বোঝাপড়াই হলো অস্তিত্ববাদ।

কাদেরের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা স্বচক্ষে দেখার পর আরেফ আলির বার বার মনোদ্বন্দ হয়েছে যে কাদের হয়তো মেয়েটিকে খুন করেছে। অথবা কাদের খুন করতে চাইনি কিন্তু বাঁশঝাড়ে আরেফ আলির উপস্থিতির  কারনে বিপরীত ঘটনা ঘটে গেছে।

আরেফ আলি জানে,খুনের ঘটনা পুলিশকে বলে দিলে কাদেরের ফাসি হবে, অথবা কাদেরের বিরুদ্ধে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে আরেফ আলির ফাসি হবে। দাদাসাহেবের বাড়িতে তিনি তাঁর চাকুরী হারাবেন। তাঁর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হবে।

এতকিছু জানা সত্তেউ আরেফ আলি সত্যকে উন্মোচন করার জন্য লড়েছেন। সত্য প্রকাশ করে তিনি তাঁর অস্তিত্বকে জানান দিতে চেয়েছেন। আর এই সত্য উন্মোচন ই হলো আরেফ আলির অস্তিত্ববাদী দর্শন।

চেতনা প্রবাহ রীতি

চাঁদের অমাবস্যা উপন্যাসে খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরেফ আলির মনোজগতে চিন্তা-চেতনার যে আলোড়ন সৃষ্টি হয় তা-ই চেতনা প্রবাহ।

কাদের সাথে মেয়েটির কি সম্পর্ক? পরকীয়া সম্পর্ক থাকলে সে মেয়েটিকে খুন করবে কেন?
মেয়েটির লাশ বহন করার জন্য কাদের তাকে ডাকলো কেন?

খুনের ঘটনা প্রকাশ করা যাবে কিনা, প্রকাশ করলে কি ঘটতে পারে, পুলিশ কে জানানোর আগে দাদাসাহেবকে জানাবে কিনা, জানালে তাঁর কি হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি চিন্তা ভাবনা বার বার কাদেরের মনোজগতকে নাড়া দিয়েছে।

যে কারনে প্রতিটি ঘটনাকে তিনি চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। এই বিশ্লেষণই হলো চেতনাপ্রবাহ রীতি।

অন্যান্য বিষয় পড়তে নিচে ক্লিক করুন –

পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের কপিলা চরিত্র বিশ্লেষণ।

another subject- click here

1 thought on “চাঁদের অমাবস্যা উপন্যাস রিভিউ (অস্তিত্ববাদী,মনস্তাত্ত্বিক,চেতনা প্রবাহ রীতি)”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *