বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসের এজিদ চরিত্র/রিভিউ/বিষাদসিন্ধুর পুনর্বিচার

বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসের এজিদ চরিত্র রিভিউ বিষাদসিন্ধুর পুনর্বিচার

বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসের মূল হলো এজিদ চরিত্র । বাংলা সাহিত্যে প্রথম মুসলিম ঔপন্যাসিক মীর মশাররফ হোসেন কর্তৃক রচিত এক অনন্য উপন্যাস বিষাদ সিন্ধু। বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসটি এক ভিন্ন ধর্মী উপন্যাস । এটি একটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস ও বলা চলে।

ইসলাম ধর্মের এক করুন কাহিনী অনুযায়ী অর্থাৎ ইমাম হাসান -হোসেনের জীবনের করুন কাহিনী অনুযায়ী এ উপন্যাস রচিত। জয়নাবের প্রতি এজিদর কামুক দৃষ্টি,  এবং কারবালার সেই দুর্ধর্ষ ভয়াবহ দিন; ইত্যাদির সন্নিবেশে মানুষের মনের সুখ দুঃখের কাহিনির সমন্বয়ে মীর মশাররফ হোসেন চরিত্র গুলোর মধ্য দিয়ে তৈরি করেছেন  ‘বিষাদ সিন্ধু ‘ উপন্যাস। 

ডক্টর কাজী আবদুল মান্নান বলেছেন, 

”বিষাদসিন্ধু গ্রন্থেও তিনি মানব চিত্তের প্রদাহ, তার অন্তরের গভীর বেদনা, তার কামনা-বাসনার প্রদীপ্ত অভিব্যক্তিকে আধুনিক শিল্পীর মন নিয়েই অংকিত করেছেন ”

সমালোচক মুনীর চৌধুরী এজিদ চরিত্রটিকে গ্রন্থের সর্বাপেক্ষা “স্পষ্ট এবং প্রদীপ্ত চরিত্র” বলেছেন।  তার মতে লেখক বড় সযত্নে এ চরিত্রটি নির্মাণ করেছেন।

সমালোচকের ভাষায়-

” নীতিবিদ্যার দৃষ্টিতে এজিদের ক্রিয়াকর্ম যত গর্হিত ও অভিশপ্ত বিবেচিত হোক না কেন চরিত্র বিচারের সাহিত্যিক মানদণ্ডে এজিদের মত প্রাণময়ী পূর্ণাবয়ব পুরুষ সমগ্র উপন্যাসে দ্বিতীয়টি নেই। এজিদ পাপি, ধর্মদ্রোহী এবং ইন্দ্রিয় পরবস। কিন্তু এজিদের পাপের প্রকৃতি অসামান্য, বিকাশ প্রলয়ঙ্করী, তার পরিণাম যেমন ভয়াবহ, তেমনি শোকাবহ। ”

বিষাদসিন্ধুর পুনর্বিচার :

এক সুন্দরী নারী জয়নবের প্রেমে পড়ে এজিদ সুখ -সম্পদ, রাজ্য, অর্থ সবকিছুর মোহ ত্যাগ করে সেই নারীর পেছনেই বারবার ছুটেছে ।রাজ্য নয় রমণী তার লক্ষ্য। জয়নাবের প্রতি তার প্রেম আসক্তির তীব্রতা সম্পর্কে লেখক বলেছেন –

“ এজিদের শিরায় শিরায় শানিত বিন্দুর প্রতি পরমাণু প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসে স্বয়নে স্বপনে জয়নাব লাভের চিন্তা অন্তরে অবিরতভাবে রহিয়াছে। ”

[ মহরম পর্ব 3 ]

জয়নাবকে পাবার জন্য এজিদ মন্ত্রী মারওয়ান কে বলেছে –

“ ভাই মারওয়ান যদি এজিদের মনের দুঃখ দূর করিতে চাও, যদি এজিদের জয়নাব লাভের আশা করি বিষাদসিন্ধু হইতে উদ্ধার করিতে চাও, তবে এখনই অগ্রসর হও আর পশ্চাতে ফিরিও না।”

 অর্থাৎ এজিদের জীবনের সমস্ত সুখের কারণ ও বলতে পারি জয়নাবকে আবার এই জয়নাবের অপ্রাপ্তি এজিদের জীবনের সমস্ত দুঃখের মূল হিসেবেও বলতে পারি। প্রেম পরিণয় বিরহবেদনা ছিন্নভিন্ন হওয়ার মতো এক সংবেদনশিল মনের অধিকারী এজিদ।

এজিদ পাপি ধর্মদ্রোহী তবে স্বপক্ষীয় কৃতি  সৈনিককে পুরস্কার দানে সে মুক্তহস্ত। অসহায় বন্দিনী কে লাঞ্ছিত করতে কুণ্ঠিত। অত্যাচারের মধ্যে নিসংসতা নির্মমতা থাকতে পারে কিন্তু ক্ষুদ্রতা ও নীচতা নেই।

বন্দিনী জয়নাবের উদ্দেশ্যে তার যে সরাসরি ব্যাকুল নিবেদন তার মধ্যে দাম্পত্যের চিহ্নমাত্র নেই আছে শুধু ক্ষোভ, বেদনা ও দাহ। 

এজিদ জয়নাবকে বন্দি করার পর জয়নাবের প্রেমপ্রার্থী এজিদ আর সেই জয়নাবের হাস্যোজ্জ্বল চেহারা দেখতে পায় না। জয়নাবের এই বিষন্নতা দেখে এজিদ বলেছেন –

“এ ভীষণ সমর কাহার জন্য? এ শোণিত প্রবাহ কাহার জন্য? কি দোষে এজিদ আপনার ঘৃণার্হ। কি কারনে আপনার চোক্ষের বিষ? কি কারনে দামেস্কের পাট রানী হইতে আপনার অনিচ্ছা?”

[ উদ্ধার পর্ব 3 ]

অনেক অনেক হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংস,লুটপাট,,মারামারি, খুন,এত এত বিনাশ হওয়া সত্ত্বেও এজিদ দেখলো জয়নাব এজিদের প্রতি অনুরক্ত নহে।এজিদের চাই এক হাস্যজ্জল জয়নাবকে কিন্তু জয়নাব এজিদকে  চাই না। জয়নাব এজিদকে ভীষণ ঘৃণা করে কারণ এজিদ কাফেরের সমমূল্য ।

অবশেষে এজিদ জয়নাবের মন না পেয়ে হতাশ হয়ে বলেছে –

“কেন হেরিলাম! সে জ্বলন্ত রূপ রাশির প্রতী কেন চাহিলাম? হায়! হায়! সেই একদিন আর আজ একদিন! কী প্রমাদ! প্রেমের দায়ে কি না ঘটিল? কত প্রাণ ছি! ছি! কত প্রাণ বিনাশ হইল।”

[ উদ্ধার পর্ব 3 ]

অন্যান্য বিষয় জানতে-click here

এজিদ চরিত্র সম্পর্কে জানতে – click here from

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *